আরিফ আনজুম
বর্ষ পরিক্রমায় হারিয়ে গেল একটি বছর। পৃথিবীর বর্ষপরিক্রমায় যুক্ত হল আরেকটি পালক। নতুন একটি বর্ষে পদার্পন করল এই অধরা। দিনে দিনে বর্ষ শেষ হয়ে এল। ইতিহাসের পাতায় নথিপত্র হল আরও একটি বছর-২০২২। সম্ভাবনার অপার বারতা নিয়ে শুরু হল নতুন বছর। স্বাগত ইংরেজি নববর্ষ, স্বাগত-২০২২।
৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ০১ মিনিটে ভুমিষ্ট হল নতুন একটি বছরের। পুরনো একটি বছরকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দূরন্ত আহবানে মানুষ স্বাগত জানাল অনাগত ভবিষ্যতকে। সারা পৃথিবীতে সাড়ম্বরে ইংরেজি নববর্ষ পালনের প্রস্তুতি শুরু হয় ৩১ ডিসেম্বও রাত ১২টার পরে। যা থার্টিফার্স্ট নাইট নামে পরিচিত। পশ্চিমা সংস্কৃতির এই থার্টি ফাস্ট নাইটের হাওয়া আমাদের দেশেও এসে লেগেছে। পৃথিবীর প্রায় সব জাতি নববর্ষের প্রথম দিনটি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী পালন করে। জাতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সাথে এই বর্ষবরণ সম্পৃক্ত। ইরান, গ্রীস, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে তাদের নিজস্ব কৃষ্টি অনুযায়ী বর্ষবরণকে স্বাগত জানায়। শুধুমাত্র ইউরোপের কিছু দেশ আর আমেরিকা এই দিনটিকে জানুয়ারি মাসে “নিউ ইয়ার্স ডে” হিসাবে পালন করে। নববর্ষ পালনের উদ্দেশ্য হল নতুন উৎসাহ, নতুন প্রেরণা, নতুন আশায়, নতুন স্বপ্নে জীবনকে শুরু করা যা দেশ ও সমাজ তথা বিশ্বের জন্য বয়ে আনবে কল্যাণ।
নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার উৎসব নতুন নয়। সেই প্রাচীনকাল থেকেই এ রীতির প্রচলন রয়েছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম সার্বজনীন উৎসবগুলোর মধ্যে নববর্ষ উদযাপন অন্যতম একটি। আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বছর পূর্বে নববর্ষ পালনের রীতি শুরু হয়েছে। অধিকাংশ সূত্রমতে, মেসোপটেমিয়ান সভ্যতায় নববর্ষ উদযাপনের রীতি শুরু হয়।
তবে নির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে ব্যাবিলনবাসীরা প্রায় ২ হাজার খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে বিপুল আয়োজনে বর্ষবরণ শুরু করে। প্রাচীন ব্যবিলনের নতুন বছর শুরু হতো চাঁদ দেখা সাপেক্ষে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ সালে রোমান নিনেটররা ঘোষণা করেন জানুয়ারির এক তারিখই হবে বছরের পহেলা দিন। তারপরেও খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সাল পর্যন্ত বর্ষপঞ্জি পরিবর্তিত হতে থাকে। সম্রাট জুলিয়াস সিজার এটি আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে একে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারও বলা হয়। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করে নতুন বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করেন। সে অনুসারেই বিশ্বব্যাপি ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে।
পৃথিবীর প্রত্যেকটি জাতির নিজস্ব ক্যালেন্ডারবর্ষ রয়েছে। বর্ষ পরিক্রমায় একটি বছর শেষ হয়ে নতুন বছরের আগমন ঘটে নতুন সম্ভাবনা আর নবদিগন্তের সূচনা নিয়ে বছরের শেষ সূর্যোদয়ে মানুষের একান্ত প্রার্থনা থাকে আগামী প্রজন্মও যেন সুখের বারতা বয়ে আনে। আশা-নিরাশার দোলাচলে মানুষ এগিয়ে চলে স্বপ্নকে পুঁজি করে। নতুন বছরে নতুন স্বপ্নকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলার প্রয়াস প্রত্যেকেরই। বছর শেষে অপ্রাপ্তিগুলোর জন্য ব্যথিত না হয়ে বরং নতুন বছর উদযাপনের আয়োজনে সকলে ব্যস্ত সময় পার করে। নানা রকম অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বছর শেষৈর দিনটিতে মানুষ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে একত্রে নতুন বছর বরণের জন্য উৎসবে মেতে ওঠে।
প্রত্যেক জাতি বা রাষ্ট্রের নিজস্ব নববর্ষ আয়োজনের রেওয়াজ রয়েছে। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ আয়োজন তাদের রাষ্ট্রীয় গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে ইংরেজি বর্ষ অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় দিন গণনা। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষ গণনায় প্রচলন রয়েছে। তাই ইংরেজি নববর্ষ সারা পৃথিবীতে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়। ইংরেজি নববর্ষ পালনের ধরন সারা পৃথিবীতে একই ধরনের হয়ে থাকে। তবে পশ্চিমা বিশ্বে এর আনন্দচ্ছটা একটু বেশি। আমাদের দেশেও “নিউ ইয়ার” বা ইংরেজি নববর্ষ পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি চোখে পড়ে। পশ্চিমাদের সাথে তাল মিলিয়ে বাঙালি এখন নতুন আনন্দে মেতে উঠেছে। থার্টি ফার্স্ট পালনের উৎসবে আত্মহারা হয়ে যান বাঙালি তরুণ-তরুণীরা। ভিনদেশি রেওয়াজ মেনে দিনটি উদযাপন করতে গিয়ে দেশীয় সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক অনেক আয়োজনই যুক্ত হয় থার্টি ফার্স্ট নাইট এর উৎসবে। তবুও নতুন বছরের আগমনে প্রথম দিনের প্রথম প্রহরে বাড়তি রোমাঞ্চ নিয়ে উন্মাদনায় মেতে ওঠেন সবাই। বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাসে ভেসে যায় রাতের আঁধার। আতশবাজি আর রঙিন আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে মানুষের মন।
ইংরেজি নববর্ষের এই শুভলগ্নে সারা পৃথিবীর মানুষ সমবেত হয় আনন্দ আয়োজনে। উৎফুল্ল মানুষ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাগত জানায় নতুন বছরকে আর প্রার্থণা থাকে সমস্ত বাঁধা বিঘ্ন কেটে গিয়ে পৃথিবীতে নতুন সূর্য উদিত হওয়ার।
আরিফ আনজুম: শিশুসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক