আমাদের এক এবং অদ্বিতীয় নেতা

সিদ্ধার্থ সিংহ
সক্কালবেলায় হইহই কাণ্ড। সমস্ত কাগজের প্রথম পাতায় একটাই খবর—নেতাজি জীবিত। সঙ্গে প্রমাণস্বরূপ তাঁর সদ্য তোলা ছবি।পাড়ায় পাড়ায়, চায়ের দোকানে, অফিসে, বাসে, ট্রামে, সিনেমার লাইনে সে দিন আলোচনার বিষয় ছিল একটাই— নেতাজি তা হলে বেঁচে আছেন! কেউ কেউ বললেন, আমি জানতাম। বলতাম না? দেখবি, উনি একদিন ঠিক ফিরে আসবেন।
সন্তানদলের কেউ কেউ আবার আরও একধাপ এগিয়ে বললেন, আমাদের বালক ব্রহ্মচারী তো কবেই বলেছিলেন, উনি জীবিত। দেখিসনি, দেওয়ালে দেওয়ালে বড় বড় করে লেখা থাকত, নেতাজি জীবিত। ফিরে আসবে নেতার বেশেই। কী? মিলে গেল তো?
কিন্তু সমস্ত জল্পনা-কল্পনা আর আলোচনায় জল ঢেলে দিল পরের দিনের কাগজ। তাতে জানা গেল, খবরটি পুরো ভুয়ো। আর ছবিটিও জাল। নেতাজির ধড়ের সঙ্গে নেতাজির মতো মেক-আপ করা তাঁর ভাইপোর মুখ নিখুঁত ভাবে জুড়ে সুপার ইম্পোজ করে ওই ছবিটা তৈরি করা হয়েছে।
শুধু সে বার নয়, ‘নেতাজি বেঁচে আছেন’, ‘নেতাজি জীবিত’, ‘দেশে যদি ফের তেমন কোনও অসময় ঘনিয়ে আসে, উনি নিশ্চয়ই ফিরে আসবেন’— এ রকম নানা কথা বারবার শোনা গেছে।
আসলে নেতাজি বলতে যে কোনও নেতাকে বোঝালেও আমরা কিন্তু নেতাজি বলতে একজনকেই বুঝি। আর তিনি হলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
আমার মা তাঁর পালিত একটি মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন হাওড়ার দাশনগরের একজনের সঙ্গে। তাঁর কপালের  ডান দিকে আলুর মতো ফোলা ছিল। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, টিউমার-ফিউমার হবে। কে যেন মজা করে বিয়ের আসরে আমাদের সামনেই বলেছিল, এ বার ওটা অপারেশন করিয়ে ফেলুন। না হলে বউকে চুমু খেতে গেলে তো অসুবিধে হবে। তার উত্তরে উনি যা বলেছিলেন, আমিও চমকে উঠেছিলাম। আর তখনই জেনেছিলাম, উনি আগে মিলিটারিতে চাকরি করতেন। যে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি নিখোঁজ হয়ে যান, সেই দুর্ঘটনার জায়গায় নাকি উনি তখন পোস্টিং ছিলেন। ওই বিমানেরই একটি টুকরো ছিটকে এসে তাঁর কপালে লাগে।
তাই নাকি? আমরা অবাক। আপনি তখন ওখানে ছিলেন? আচ্ছা, নেতাজি কি সত্যিই ওই প্লেনে ছিলেন? আপনি তাঁকে দেখেছেন?
উনি কথা বাড়াননি। শুধু বলেছিলেন, আমি তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম। কোনও দিকে তাকাবার ফুরসত পাইনি। ধরাধরি করে কয়েক জন লোক আমাকে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলেন। শুশ্রূষা করে যখন খানিকটা সুস্থ করলেন, শুনলাম, ওখানে নাকি কয়েকটা ঝলসানো দেহ পাওয়া গেছে। কোনটা কার দেহ শনাক্ত করা যায়নি। পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
সত্যিই কি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল? নাকি সবাই মরেননি। দু’-একজন জখমও হয়েছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যেই হয়তো নেতাজি ছিলেন। যতই ইংরেজদের আমল হোক, তাঁরা যতই তাঁদের বিশ্বস্ত কর্মচারী হোন না কেন, ওখানে যাঁরা ছিলেন তাঁরা বেশির ভাগই ছিলেন ভারতীয়। আর ভারতীয় মাত্রই ছিলেন নেতাজি-অন্তপ্রাণ। তাই, অত্যন্ত যত্ন ও ভালবাসার সঙ্গে তাঁর পরিচর্যা করে, তাঁকে সুস্থ করে হয়তো গা ঢাকা দেবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন ওঁরাই।
সত্যিই যদি এটা হতো, তা হলে একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, তার পরে উনি আর প্রকাশ্যে এলেন না কেন? নাকি এই দেশেরই কোনও স্বদেশি নেতা তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন, সুভাষচন্দ্র বেঁচে থাকলে দেশ যখন স্বাধীন হবে তখন সারা দেশ তাঁকে নিয়েই মাতামাতি করবে। তাঁর কথাই শুনবে। তাঁকেই ঈশ্বরের মতো ভক্তি করবে। ফলে তাঁরা হারিয়ে যাবেন। কেউ তাঁদের দিকে ফিরেও তাকাবে না। তাই ফন্দি এঁটে, কৌশল করে, তাঁকে সরিয়ে দিয়েছিলেন এই পৃথিবী থেকে! নাকি ওই বিমানে তিনি আদৌ ছিলেনই না! পুরোটাই গুজব!
১৩৪৭ সনের ১৫ মাঘ, মঙ্গলবার আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতা জুড়ে বড় বড় শিরোনামে ছাপা হয় একটি খবর— ‘শ্রীযুক্ত সুভাষচন্দ্র বসুর আকস্মিক গৃহত্যাগে দেশব্যাপী গভীর বিষাদের ছায়াপাত’। এই হেডলাইনের তলায় তুলনামূলক ছোট হরফে কয়েকটি লাইনে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয় আরও চার
-চারটে সাব হেডিং। প্রথম সাব হেডিং— দেশপ্রিয় নেতার জন্য জনসাধারণের আকুল উৎকণ্ঠা। দ্বিতীয় সাব হেডিং— ‘আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীগণের উদ্বেগ’। তৃতীয় সাব হেডিং— ‘আধ্যাত্বিক প্রেরণায় সংসার পরিত্যাগ বলিয়া অনুমান’। আর চতুর্থ এবং শেষ সাব হেডিং— ‘সোমবার শেষ রাত্রি পর্যন্ত সকল অনুসন্ধান চেষ্টা ব্যর্থ’।
পাতার অর্ধেকেরও বেশি জায়গা জুড়ে এই খবরের নীচে ছিল আরও দু’-দুটো ছোট্ট খবর। তার একটার শিরোনাম— ‘শ্রীযুক্ত সুভাষচন্দ্র বসুর মামলা’। এই হেডিংয়ের নীচে ওর থেকে একটু ছোট হরফে লেখা ছিল— ‘গৃহ হইতে নিরুদ্দেশ বলিয়া স্থগিত ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী’। আর ডান দিকের দ্বিতীয় শিরোনামটি ছিল— সুভাষ বাবুর বাড়িতে খানাতল্লাশ’।
এই খবর পড়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ অনেকেই ভেবেছিলেন, তাঁর বাড়িতে আচমকা যে তল্লাশি হয়েছে, তার জেরে কিংবা ফের হঠাৎ করে যে কোনও সময় ঝামেলা হতে পারে আন্দাজ করে উনি নিজেই হয়তো সরে পড়েছেন বা গা ঢাকা দিয়েছেন। সময় হলেই ফিরে আসবেন।
কেউ কেউ আবার প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করলেন, ইদানিং উনি যে ভাবে আধ্যাত্বিকতার দিকে ঝুঁকছিলেন, হয়তো তার টানেই উনি সংসার পরিত্যাগ করেছেন। এ বার কোনও জঙ্গল-টঙ্গল বা আশ্রমে গিয়ে হয়তো সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করবেন।
এই মতটার উপরে লোকেদের বিশ্বাস এতটাই গেঁড়ে বসেছিল যে, পরবর্তিকালে শৈলমারীর আশ্রমে এক সাধুর মুখের সঙ্গে নেতাজির মুখের অদ্ভুত মিল খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু লোক ধরেই নিয়েছিলেন, ইনিই নেতাজি। নেতাজি-গবেষক অলোককৃষ্ণ চক্রবর্তী তো একটা গোটা বই-ই লিখে ফেলেছিলেন, ‘শৈলমারীর সাধু কি নেতাজি?’ সে বই মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হয়ে গেল হাজার হাজার কপি।
তখনও কেউ জানতেন না নেতাজি বিবাহিত এবং তাঁর একটা মেয়ে আছে। সে যাই হোক, এ সব ঘটনা থেকে বোঝা যায়, মানুষ কিন্তু বারবার চেয়েছে নেতাজি ফিরে আসুক। একটা মানুষের আয়ু সর্বোচ্চ কত বছর পর্যন্ত হতে পারে, তার একটা আন্দাজ থাকলেও, এ ক্ষেত্রে কিন্তু সে নিয়ে কেউ মাথা ঘামান না। তাই সওয়া একশো বছর পা দিয়েও মানুষের মনে বদ্ধমূল ধারণা, তিনি বেঁচে আছেন। বহাল তবিয়তে আছেন এবং যে কোনও দিনই ফিরে আসতে পারেন। আমার মনে হয়, এই ধারণা এখন যেমন আছে, দুশো বছর পরেও থাকবে। পাঁচশো বছর পরেও থাকবে। এমনকী হাজার হাজার বছর কেটে গেলেও থাকবে। আসলে এই ধারণাটা আমাদের রক্তের সঙ্গে একেবারে মিশে গেছে।
আচ্ছা, যদি সত্যিই এমন হয়, তিনি হঠাৎ করে একদিন কলকাতার এলগিন রোডের বাড়িতে ফিরে এলেন। ফিরে আসতেই পারেন, কারণ, ওটা তাঁর বাড়ি। কিন্তু কোথাকার জল কোথায় গড়িয়েছে উনি তার কোনও কিছুই জানেন না। জানেন না, স্বাধীনতার লড়াইয়ের জন্য দেশবাসীরা স্বেচ্ছায় যে বিপুল স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ টাকা তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলে, তাঁর রেখে যাওয়া সেই চারটে স্টিলের ট্রাঙ্ক ভর্তি ১৫৫ কেজি সোনার গয়না, ১৮,৪০০ ক্যারেটের একটি বহু মূল্যবান পান্না, ১৭,৮৮০ ক্যারেটের পান্নার তৈরি ভগবান বুদ্ধের মূর্তি, ১৪,৭০০ ক্যারেটের ১ ফুট উঁচু পান্না দিয়ে তৈরি ভগবান বুদ্ধের অবয়ব, হিরেখচিত অজস্র অলংকার, ২৮০০ টির মতো সোনার মুদ্রা, গিনি, হিটলারের দেওয়া সোনার সিগারেট কেস ছাড়াও, সেই সময়ে তাঁর রেখে যাওয়া নগদ এক কোটি টাকা এবং আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্কের ৪২ কোটি টাকার কী হল?
এমনকী এও জানেন না, ওই বাড়িতে তাঁর নামে গড়ে ওঠা রিচার্জ ব্যুরোর জন্য নরসিংহ রাওয়ের আমলে যে ছ’কোটি টাকা অনুদান হিসেবে এসেছিল, তার কী হল!
অনেকেই আছেন, যাঁদের বয়স পঁচাত্তর-আশি বছর, যাঁদের অনেকের জন্মের আগেই দেশ স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল, তাঁরা কী করে স্বাধীনতা সংগ্রামী হন! পেনশন পান! সে সময় জেল খাটেন! তাঁরা কি মায়ের গর্ভে আসার আগেই জেল খেটেছিলেন! কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতা শূন্য হাতে দেশের জন্য কাজ করতে এসে দু’-এক বছরের মধ্যেই কী করে পাহাড়-প্রমান বিষয়সম্পত্তি করে ফেলেন! একের পর এক অপরাধের পাহাড় তৈরি করেও কী করে পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়ান! তার পরেও কেউ কেউ আবার পুলিশের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বা সভাপতির আসন অলংকৃত করেন! এবং আরও আশ্চর্যের ব্যাপার, নেতাজির মতো দেশপ্রেমিকের দেশে জন্মেও কেউ কোনও প্রতিবাদও করেন না! ফলে তিনি এসে যখন এগুলো দেখবেন তখন কী হবে? কী হতে পারে! কী হতে পারে!
প্রথমেই যেটা হবে, নেতাজিকে দেখতে গিয়ে উন্মত্ত জনস্রোতের ধাক্কাধাক্কিতে কয়েক হাজার মানুষ পদপিষ্ট হয়ে মারা যাবে। পৃথিবীর সমস্ত প্রান্ত থেকে ঘনঘন বিশেষ উড়ান ছাড়া হবে দমদম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হেলিকপ্টার উড়ে আসবে রেসকোর্সের ময়দানে। ভারতের ছোট-বড় সব ক’টা রাজনৈতিক দলের নেতারা তড়িঘড়ি গোপন বৈঠকে বসবেন। রাতারাতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে ফরওয়ার্ড ব্লক। মানুষের দাবি মেনে, সংবিধান সংশোধন করে এক সপ্তাহের মধ্যে ডাকা হবে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে সব দলের সব ক’টা প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। নিরানব্বই শতাংশ, না না, নিরানব্বই নয়, নাইন্টিনাইন পয়েন্ট নাইন পার্সেন্ট ভোট পেয়ে সারা দেশের শাসনভার গ্রহণ করবে ফরওয়ার্ড ব্লক আর তার সর্বময় কর্তা স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। বয়সের ভারে তিনি না পারলে, উনি রাজি না হলেও এই দেশের লোকেরাই তাঁর মেয়েকে ভারতের আমন্ত্রিত প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি করে ছাড়বেন। আবেগে আপ্লুত হয়ে এপার বাংলা ওপার বাংলার জনগণরাই উপড়ে ফেলবে মাঝখানের ওই কাঁটাতারের বেড়াজাল। উঠে যাবে পার্ক সার্কাসের বাংলাদেশ হাই কমিশনের অফিস। সুইডিশ অ্যাকাডেমি তড়িঘড়ি মিটিংয়ে বসে, এত দিন তাঁকে দেওয়া হয়নি দেখে দুঃখ প্রকাশ করে, নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপক হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করে দেবে।
যাঁরা রাস্তার নামকরণ করেন, তাঁরা নিজেরাই নিজেদের তারিফ করবেন, নেতাজির নামে দোকান, বাজার, অঞ্চল, গ্রাম, শপিং কমপ্লেক্স, রাস্তার নাম, রোড, লেন, বাই লেন, এভিনিউ— যা ইচ্ছে তাই করলেও ভাগ্যিস তাঁর নামের সঙ্গে কখনও ‘সরণি’ জুড়ে দেননি দেখে! না হলে যে কী লজ্জার হতো!
এত দিন ধরে পড়া স্কুল পাঠ্য থেকে নেতাজির জীবনীর অংশটুকু ফেলে দিয়ে নতুন করে লিখতে হবে তাঁর জীবনী। রাতারাতি একটা চ্যানেলই তৈরি হয়ে যাবে শুধু তাঁর জন্য। তখন অন্য আর কোনও চ্যানেল কেউ দেখবেই না। তিনি তার মাধ্যমে ফোন ইন প্রোগ্রামে সরাসরি কথা বলবেন জনগণের সঙ্গে। নানান নির্দেশ পাঠাবেন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে। তিনি সত্যি সত্যিই ফিরে এলে আর কী কী হবে, তা একবার ভাবতে গেলেই চমকে উঠতে হয়।
তবে হ্যাঁ, এ রকম অলৌকিক কোনও কিছুই কখনও ঘটবে না। কোনও অলৌকিক শক্তিবলে তিনি যদি সত্যি সত্যি ফিরেও আসেন, সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে অপহরণ করে এমন জায়গায় সরিয়ে দেওয়া হবে, যাতে পৃথিবীর কেউ তাঁর কোনও হদিল না পান। এটা করা হবে নেতাজির স্বার্থেই। কারণ, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের মধ্যরাতে দেশ-নেতাদের হাতে ইংরেজরা যখন এই দেশ তুলে দেন, তখন নাকি একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই চুক্তিতে এক, দুই, তিন করে পর পর অনেকগুলো শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। সেই শর্তগুলো না মানলে ইংরেজরা নাকি এই দেশ তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের হাতে কিছুতেই তুলে দিতেন না।
কী সেই শর্ত? বহু বার বহু রাজনৈতিক দল তা জানানোর জন্য দাবি তুলেছিল। আন্দোলন করেছিল। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। বিরোধী দলের নেতারা গলা ফাটানোর আগেই কোনও এক অজানা কারণে বারবার ধামাচাপা পড়ে গেছে সেগুলো। লোকেরা বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় দু’-চার জন নেতা ছাড়া সেটা আর কেউ জানেন না। তবে, সে রকমই এক নেতার মুখ ফসকে একবার বেরিয়ে পড়েছিল একটা ক্লু। আর সেটা হল— নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ফিরে এলে ইংরেজদের হাতে তাঁকে তুলে দিতে হবে।
সেই ন্যাক্কারজনক চুক্তিপত্রে নাকি স্বাক্ষর করেছিলেন এমন কয়েক জন দেশবরেণ্য নেতা, যাঁদের নাম উচ্চারিত হলে আমাদের মাথা শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে। ভাবা যায়!
যদিও সেই ইংল্যান্ড আর নেই, ভারতও নেই আগের মতো, যে কোনও আঘাতের সমুচিত প্রত্যাঘাত করতে এখন সে সক্ষম। পালটে গেছে পৃথিবীর পুরো পরিস্থিতি। তবু চুক্তি, চুক্তিই। ওই বিমান দুর্ঘটনায় সত্যিই যদি তাঁর কোনও অঘটন না ঘটে থাকে এবং ১৯৪৭-এর ১৪ আগস্টের মধ্যরাতে ওই চুক্তির পরেও যদি তিনি বেঁচে থাকেন, জানি না সেই চুক্তির খবরটা তিনি পেয়েছিলেন কি না! পেয়ে থাকলে তাঁর অবস্থা কেমন হয়েছিল একবার ভেবে দেখুন। আমার তো একটাই সংশয়, দেশের নেতাদের ওই কীর্তিকলাপ দেখে তিনি সে দিন শোকে, দুঃখে, লজ্জায়, হতাশায় আত্মহত্যা করে বসেননি তো!
Print Friendly, PDF & Email

Related Posts