সামাজিক সুরক্ষায় ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা’ যুগান্তকারী পদক্ষেপ

আ ফ ম সিরাজুল ইসলাম (শামীম)

 

দুর্ঘটনা মানব জীবনের নিত্যসঙ্গী। দৈনন্দিন জীবনে মানুষকে সর্বদা দুর্ঘটনা ও মৃত্যু ঝুঁকি মাথায় নিয়ে পথ চলতে হয়। বিশেষত রাস্তা-ঘাটে চলাচলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ দুর্ঘটনার মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকে।

প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন অথবা পঙ্গুত্ববরণ করেন। ফলে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যরা নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এদের একটা বড় অংশ পরবর্তীতে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায় এবং ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেয়। আহতদের অধিকাংশই সুচিকিৎসার অভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করে। এভাবেই দেশের কর্মক্ষম জনশক্তি নষ্ট হয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের বোঝা হয়ে উঠে, হঠাৎ করে একটি পরিবার সচ্ছল অবস্থা থেকে হত-দরিদ্র অবস্থায় পতিত হয়।

সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে বিগত ৩ বছরের সড়ক দুর্ঘটনার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা হয় যথাক্রমে ৪৬৯৩, ৪৭৩৫ ও ৫৩৭১টি এবং উক্ত দুর্ঘটনাসমূহে নিহত হয় যথাক্রমে ৫২১১, ৫৪৩১ ও ৬২৮৪ জন মানুষ। দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা উল্লেখ না থাকলেও এটা সহজেই অনুমেয় আহতের সংখ্যা নিহতের সংখ্যার কয়েকগুণ হবে। পাশাপাশি, কল-কারখানায় কর্মরত শ্রমজীবী মানুষ, রিকশা, অটোরিকশা ও ভ্যান চালক’সহ ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা অহরহই বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে জীবন হারায় বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খায়, কূলে ভিড়ার কোন উপায় খুঁজে পায়না। আজকাল টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকা খুললেই বিভিন্ন কারখানায় অগ্নি দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায় (যেমন কিছুদিন পূর্বে নারায়ণগঞ্জের প্লাস্টিক ফ্যাক্টরীর অগ্নি দুর্ঘটনা)।

দুর্ঘটনাজনিত উদ্ভুত সমস্যাবলী লাঘবে সামাজিক সুরক্ষা বলয় তৈরী করা আবশ্যক। উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিশাল এ জনগোষ্ঠির জীবনযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত উন্নয়ন নিতান্তই সময় সাপেক্ষ বিষয়। নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পর্যায়ের মানুষকে সকল ঝুঁকি মাথায় নিয়েই জীবিকার সন্ধানে মাঠে-ঘাঠে ছুটে বেড়াতে হয়। এ শ্রেণীর লোকজন উন্নত জীবন ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত যানবাহন, সুপরিসর ও নিরাপদ কর্মস্থল প্রভৃতি থেকে যোজন-যোজন দূরত্বে অবস্থান করে। এসব সুবিধা তাদের জন্য আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র। তাদের পক্ষে ঝুঁকিমুক্ত জীবন-যাপন করা অসম্ভব ও অবাস্তব। নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পর্যায়ের মানুষজন দীর্ঘ মেয়াদী জীবন বীমা পলিসি গ্রহণ করে নিজেদের অর্থনৈতিক সুরক্ষিত রাখতে একেবারেই সক্ষম নয়, কেননা তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এ মৌলিক চাহিদা মিটাতেই অনেক সময় অক্ষম হয়ে পড়ে। তবে, এক্ষেত্রে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন সমাজের অবহেলিত, দরীদ্র, শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের অসহায়ত্ব বিবেচনায় দুর্ঘটনার ক্ষয়-ক্ষতি পূরণার্থে সর্বসাধারণের জন্য উপযোগী বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা পলিসি প্রবর্তন করেছে।

এ পলিসি গ্রহণের মাধ্যমে বছরে মাত্র ১১৫ টাকা ব্যয় করে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। যার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার একটা বাঁচার অবলম্বন পায়। আহত ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে সক্ষম হয়। বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমার সফল প্রয়োগে ব্যক্তি পর্যায়ে ভিক্ষাবৃত্তি ও হঠাৎ করে হতদরিদ্র হওয়ার হার অনেকাংশে হ্রাস পাবে। ফলশ্রুতিতে সমাজ তথা রাষ্ট্রের বোঝার ভার লাঘবের মাধ্যমে সুন্দর ও গতিশীল সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হবে।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক সময় বীমা পেশায় যুক্ত ছিলেন। জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীতে তাঁর নামে এ বীমা পলিসি নামকরণ করায় একে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।

পরিশেষে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা একটি শক্তিশালী নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।

লেখক: বীমাবিদ, এবিআইএ, এমআইআরএম (ঢা.বি.)

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts