১৯৭১ সালের স্মৃতি এখনো মনে পড়ে পাকিস্তানের কিংবদন্তি চিত্রনাট্যকার ও সঞ্চালক আনোয়ার মাকসুদ-এর। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো কাঁদি। আমি এখনো বাংলা গান শুনি। বাংলাদেশি চিত্রশিল্পীদের অনেক চিত্রকর্ম আমার সংগ্রহে রয়েছে। পাকিস্তানের সবচেয়ে ভালো অংশটা (বাংলাদেশ) আমরা হারিয়ে ফেলেছি।’
পডকাস্টের সঞ্চালক জানতে চান, আমরা কি তাদের (বাংলাদেশিদের) ওপর নির্যাতন করেছি?
প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার মাকসুদ বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমরা যা করেছি, সেটাকে ‘নির্যাতন’ বললে তা খুব ছোট হয়ে যায়। তারা নির্বাচনে (১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন) জিতে গিয়েছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত আমরা সরকার চালিয়েছি। আর চার বছরের জন্য তাদের হাতে শাসনভার ছেড়ে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো?’
আপনার দৃষ্টিতে এখানে সবচেয়ে বড় অপরাধী কে?
উত্তরে আনোয়ার মাকসুদ বলেন, ‘এটা সবাই জানে।’
১৯৪৭ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। জন্ম হয় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৪৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাঙালিদের প্রতি নানামুখী বৈষম্যমূলক আচরণ করে পাকিস্তান সরকার। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ।
কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের একটি পডকাস্টে কথা বলেন পাকিস্তানের এই কিংবদন্তি চিত্রনাট্যকার ও সঞ্চালক। পাকিস্তানের বিভাজন প্রসঙ্গে আনোয়ার মাকসুদ বলেন, ‘আমাদের অর্ধেক দেশ চলে গেছে। আমাদের ওই অর্ধেক অংশের কথা অনেক মানুষই ভুলে গেছে। এখনকার ছেলে-মেয়েরা তো জানেই না বাংলাদেশ পাকিস্তানেরই অংশ ছিল। বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়ে পাকিস্তান বানিয়েছিল, যদি তারা ভোট না দিতো তবে পাকিস্তান হতো না। অথচ তাদের সঙ্গে আমরা কী করেছি!’
আমরা আমাদের ভুল থেকে কিছু শিখিনি? সঞ্চালকের এ প্রশ্নের উত্তরে আনোয়ার মাকসুদ বলেন, ‘আমরা আমাদের ভুল থেকে কিছুই শিখিনি। ভুট্টো সাবকে ফাঁসি দিয়েছে, বেনজিরকে হত্যা করেছে। আমরা কী করেছি?’
১৯৩৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণ করেন আনোয়ার মাকসুদ। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের করাচিতে পাড়ি জমায় তার পরিবার। পরবর্তীতে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে উপলদ্ধি করেন সৃষ্টিশীল লেখালেখি তার পছন্দ। এরপর টিভি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন।
আনোয়ার মাকসুদ সঞ্চালিত কমেডি ঘরানার ‘লুজ টক’ অনুষ্ঠানটি ভারতীয় উপমহাদেশে জনপ্রিয় ছিল। এ শোয়ে তার সঙ্গে পারফর্ম করতেন পাকিস্তানি অভিনেতা মইন আখতার। আনোয়ার মাকসুদ রচিত উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক নাটক হলো— ‘সিতারা আউর মেহরুননিসা’, ‘নাদান নাদিয়া’ প্রভৃতি।