মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকৃষ্ট সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণের এই আইন মুজিববর্ষের অনন্য অর্জন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের এগারো মাসের মাথায় প্রণীত দেশের সংবিধানের মাধ্যমে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান সংযোজন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মূলত এর মাধ্যমেই বাংলাদেশে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র এই সাংবিধানিক সংস্থার যাত্রা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- সে সময় বিশ্বের অনেক দেশে নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টি নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত থাকলেও বঙ্গবন্ধু সেটি করেননি। জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে এটাকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছেন।
সংবিধানের ১১৮ (১) নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করিবেন।’ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও এই আইন প্রণয়ন হয়নি। সরকার এসেছে, সরকার গেছে এই সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে, আইনের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রায় সব রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছে। অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে এ ধরনের আইন চালু রয়েছে। সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রশ্নে সংলাপের উদ্যোগ নেন। অধিকাংশ নিবন্ধিত দল এই সংলাপে অংশগ্রহণ করে এবং সুনির্দিষ্টভাবে একটি আইন প্রণয়নের দাবি জানায়। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে দলীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করে আশ্বস্ত করেন যে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সামনে রেখে স্বচ্ছতার মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত আইন প্রণয়ন করতে তাঁর সরকার যথারীতি চেষ্টা করছে। সম্ভব হলে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন নতুন প্রণীত আইনের অনুকুলে গঠিত হবে। তার দল বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রেখেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিএনপি এবং আরও দুই-একটি নামস্বর্বস্ব রাজনৈতিক রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে সাড়া না দিয়ে অমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে। অথচ তারাই এতদিন বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এতে প্রতিভাত হয় যে, শুধু বিরোধিতার জন্যই বিএনপি বিরোধিতা করেছে, অমূলক বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী যথারীতি সদ্য সমাপ্ত সংসদ অধিবেশনে নির্বাচন কমিশন আইন-২০২২ পাস হয়েছে। মূলত এরপর থেকে বিএনপি অভিযোগ করেছে, গণতন্ত্র হত্যার জন্য আওয়ামী লীগ অমলানির্ভর ও আইন প্রণয়ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি আমলে প্রণীত একটি আইনের কথা উল্লেখ করতে চাই। ২০২১ সালের বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন আখ্যা পেয়েছিল। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতাগোষ্ঠী ও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রচন্ড চাপে ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করে বিএনপি। সেই আইনের বাছাই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ধারা ৭ (১)-এ উল্লেখ করা হয়, ‘কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে পাঁচ সদস্য সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠিত হইবে। গঠন প্রক্রিয়া নিন্মরুপ- (ক) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের একজন বিচারক: (খ) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক; (গ) বাংলাদেশের মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক; (ঘ) সরকারি কমিশনের চেয়ারম্যান; এবং (ঙ) অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের মধ্যে সর্বশেষে অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তবে শর্ত থাকে যে যদি উক্তরূপ অবসপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাওয়া না যায় অথবা তিনি বাছাই কমিটির সদস্য পদ গ্রহণে অসম্মত হন, তাহা হইলে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অব্যবহিত পূর্বের অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব, যদি উক্তরূপ কোন অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাওয়া না যায়, তাহা হইলে বর্তমানে কর্মরত মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। বিএনপি প্রণীত ওই আইনের সার্চ কমিটিতে শুধু বিচারপতি ছাড়া বাকি সবাই সরকারের সাংবিধানিক পদধারী আমলা। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ প্রণীত নির্বাচন কমিশন আইন ২০২২- কে জনবান্ধব করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বা সদ্য বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পর্যন্ত সদস্য রাখা হয়নি। অর্থাৎ আমলা নির্ভরতা এখানে কমানো হয়েছে। আইনে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, মহাসচিব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যানকে রেখে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিককে সার্চ কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। যা নিঃসন্দেহে গণমুখিতা প্রমাণ করে। শুধু তাই নয়, এই দুজন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে
একজন নারী সদস্যকে রেখে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা হয়েছে। ২০০৪ সালে বিএনপি প্রণীত দুদক আইনকে যথেষ্ট আমলানির্ভর বলার সুযোগ থাকলেও সদ্য প্রণীত নির্বাচন কমিশন আইন-২০২২ এর চরিত্র ভিন্নরূপ। কারণ, এখানে সাংবিধানিক পদধারীদের পাশাপশি বিশিষ্ট নাগরিকদের অন্তর্ভূক্ত করে নিরপেক্ষতা ও জনসম্পৃক্ততাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। উভয় আইনেই একটি পদের বিপরীতে সার্চ কমিটি কর্তৃক দুজনের নাম সুপারিশের বিধান অক্ষুণ্ণ আছে।
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন ও আইন নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা বেশ পুরনো। বলা যায় পাঁচ দশক ধরে চলছে এই বিতর্ক। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এ পর্যন্ত দেশে ১২টি নির্বাচন কমিশন হয়েছে। এই ১২ কমিশনের মধ্যে দুই-একটি ছাড়া সকলকেই কোন না কোনভাবে বিতর্কের মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে। এরমধ্যে তিনটি কমিশন পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণ না করেই বিদায় নিয়েছে। দীর্ঘ এ সময়ে দেশের ইতিহাসে ১১টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। ১৯৯৮ সালে অনুষ্ঠিত সাজানো হাস্যকর নির্বাচনের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার (সাবেক বিএনপি চেয়ারপার্সন) রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনটিও অনুষ্ঠিত হয় নুরুল ইসলাম কমিশনের অধীনে। সর্বশেষ সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর। যেখানে এইচএম এরশাদ নির্বাচিত হন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় মাসুদ কমিশনের অধীনে। এই তিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য গঠিত কোন নির্বাচন কমিশনে জনগণের আস্থা ছিল না।
\ দুই \
আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে আজ ডিজিটাল উন্নয়নের ছোঁয়া। রূপকল্প ধরা হয়েছে ২০৪১ সাল; এরমধ্যেই উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাবে বাংলাদেশ। আর পুরো এই সময়জুড়ে বাতিঘর হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর হাত ধরে বাংলাদেশের চিত্র আজ ক্রমান্বয়ে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। করোনাভাইরাস মহামারীর বিরূপ প্রভাবের মধ্যেও আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ২২৭ ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে তা এখন ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। গত এক দশকে বাংলাদেশ স্থিতিশীল জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অর্জন করেছে। এমনকি মহামারীর সময়ও আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় অনেক ভাল। মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেসসহ আরও অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। দেশের আইটি খাতের নতুন সম্ভাবনা যশোরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ করা হয়েছে।
বড় প্রকল্পগুলো নিয়ে দেশরতেœর সাহসী সিদ্ধান্তগুলোও প্রশংসার দাবিদার। এর মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগও চলমান। রয়েছে মহাকাশ জয়ের মতো বিশাল অর্জন। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ উপগ্রহ সফলভাবে মহাকাশে যাওয়ায় বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলেই আমাদের গড় আয়ু ৭১ বছর হয়েছে। মৃত্যুর হার কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে। সাত বছর ও তার বেশি বয়সের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৭০ দশমিক ৬ শতাংশই শিক্ষিত; তারা স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার দৌড়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছেন ভারত ও পাকিস্তানের আগে (আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল পিস ইনডেক্স’-এর তালিকা অনুসারে ১৬৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ৮৪ নম্বরে; যেখানে ভারত ১৪১ এবং পাকিস্তান ১৫৩ নম্বরে রয়েছে)।
আজ বিদ্যুত উৎপাদনে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমান বিদ্যুতকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৮ এবং উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াট। স্বাধীনতার ৩৯ বছরে যেখানে ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে, সেখানে শুধু ২০২১ সালের মধ্যে অর্থাৎ মাত্র ১২ বছরে (২০০৯-২০২১) ৫০ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। নির্মাণ হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যখাতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে। গ্লোবাল হেলথ সিকিউরিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশ ১৯৫টি দেশের মধ্যে ১১৩তম হয়েছে। এমপিওভ‚ক্ত করা হয়েছে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৬৮৫টি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। আশ্রয়হীনদের দেয়া হচ্ছে আশ্রায়ণ। বিধবা, বয়স্ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদানের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নে চেষ্টা চলছে। গত ১০ বছরে ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটাল সেবা প্রদান করে বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। বিনামূল্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদানও বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। মাতারবাড়ি বন্দর প্রকল্প নির্মাণকাজ চলছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৬৫ হাজার একর জায়গায় নির্মাণ হচ্ছে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর। ১০০ বছরের ভিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০।
তিন দশকের বেশি সময় আগে নিজের জীবন-সংগ্রামের বর্ণনা দিতে গিয়ে ‘ওরা টোকাই কেন (১৯৮৯)’ গ্রন্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আমার চলার পথটি কখনোই সহজ নয়। বহু চড়াই-উৎরাই পার হতে হচ্ছে। নানা সমস্যা চোখে পড়ে। দুঃখ-দারিদ্র্যক্লিষ্ট আমাদের সমাজ জীবনের এই দিকগুলো সবাই চিন্তা করুক। সমাজ ও দেশ উন্নয়নের কাজে রাজনৈতিক ও মানবিক চেতনায় সবাই উজ্জীবিত হয়ে উঠুক, এটাই আমার একমাত্র আকাক্সক্ষা।’ একই গ্রন্থের ৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- ‘দেশ ও জনগণের জন্য কিছু মানুষকে আত্মত্যাগ করতেই হয়, এ শিক্ষাদীক্ষা তো আমার রক্তে প্রবাহিত।’ শেখ হাসিনা জানেন- জনগণ ও দেশ-দশের জন্য কি করতে হয়, কিভাবে করতে হয়। তাঁর দূরদর্শিতার কারণেই ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে যে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছিল, সেই বাংলাদেশই আজ গোটা বিশ্বের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুকন্যা যদি অন্যের সমালোচনায় আটকে যেতেন, বাংলাদেশ আর ‘আজকের বাংলাদেশ’ হয়ে উঠত না; ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ই রয়ে যেত। নির্বাচন কমিশন আইন-২০২২ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তিনি যে শুধু সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণ করেছেন তা নয়, বরং ৫০ বছরের অপেক্ষার ফসলও জনগণের হাতে তুলে দিয়েছেন। এটি শুধু আইন নয়, আদতে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের মাইলফলক। উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনার এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণ এই আইন।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং চেয়ারম্যান, প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি