পদ্মাসেতু শতাব্দীর পর শতাব্দী মনে করিয়ে দেবে শেখ হাসিনার নাম

‘পদ্মাসেতু নতুন করে/করলো সেতু বন্ধন/এপার ওপার দুই পাড়েতে/হলো মেলবন্ধন।’ উদ্বোধনের অপেক্ষায় কোটি হৃদয়ের ভালোবাসার পদ্মা সেতু। ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মার উপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটবে গাড়ি। এবারের ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষরা বাড়িতে যেতে পারবেন কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই।

পদ্মা পার হওয়ার হাজারো ঝক্কিঝামেলার অবর্ণনীয় কষ্ট, কখনো কখনো এক পাড়েই বিনিদ্র রজনীযাপন, স্বজন হারানোর ঘটনা বা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা-এসব গল্পের দিন ফুরালো। আমাদের সামনে এক দারুণ নতুন দিনের সূচনা করলেন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা। ঘাতকের বুলেটে একটি পরিবার শেষ হয়ে গেলেও জাতির দিশা হয়ে বেঁচে রইলেন সে পরিবারের দুই মেয়ে। যারা এ দেশের জন্য আশির্বাদ হয়ে আছেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার অমিত সাহসে পেলাম পদ্মা সেতু। যে কীর্তি এ ভূখন্ডের মানুষকে শতাব্দীর পর শতাব্দী মনে করিয়ে দেবে তার নাম।

এক পদ্মা সেতুই পাল্টে দিয়েছে সবকিছু। যেটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে শুধু একটি সেতু নয়, একটি আবেগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা আর হার না মানা অপ্রতিরোধ্য মানসিকতার মূর্ত প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতু। স্বপ্নের এই সেতুতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের কষ্টের অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে। সেই সঙ্গে প্রাণ পাবে ওই অঞ্চলের অর্থনীতি। দেশের জিডিপিতে ইতিবাচক অবদান আসবে।

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ পদ্মা সেতু সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে উল্লেখ করেন- ‘আইফেল টাওয়ার কি ফ্রান্সকে পরিচিতি দেয়, নাকি ফ্রান্স আইফেল টাওয়ারকে? স্ট্যাচু অব লিবার্টি, টুইন টাওয়ার, পেট্রোনাস টাওয়ার-এগুলো মর্ডান মার্ভেল, তাদের দেশকে পরিচিতি দেয়, তার শৌর্যবীর্য-উৎকর্ষের মহিমা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। প্রমত্ত পদ্মার বুকে দানবাকৃতি সেতু হবে, পদ্মা পারের মানুষকে একাকার করবে, দেশকে বিভাজিত ব-দ্বীপের বিভক্তি থেকে পরিত্রাণ দেবে, সম্ভব? ভেবেছে কি কেউ? আজ দারিদ্র্য পরাজয়ের পথে। ২৫ জুন বৈশ্বিক মঞ্চে ‘আমার টাকায় আমার সেতু/বাংলাদেশের পদ্মা সেতু’ শুভযাত্রার মাধ্যমে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে আমাদের নবযাত্রা শুরু হচ্ছে-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি থাকছেন তার হুইসেল ব্লোয়ার।’

সঠিক বলেছেন বেনজীর আহমেদ। শেখ হাসিনা-ই এ জাতির হুইসেল ব্লোয়ার, এ জাতিকে নতুন করে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার কান্ডারী।

স্বপ্ন নয় বাস্তবে রূপ নিয়েছে পদ্মা সেতু। পদ্মার বুক চিরে দৃশ্যমান হয়েছে দীর্ঘ ৬.১৫ কিলোমিটার সেতু। পদ্মা সেতু দেশের মানুষের গর্ব। দেশের প্রতিটি মেহনতি মানুষের ঘাম লেগে আছে এই সেতুতে। বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এই সেতু। এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের পরিবহন, অর্থনীতি, শিক্ষা এবং চিকিৎসাসহ সকল ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। সেতুর ওপর দিয়ে চলবে গাড়ি আর নিচ দিয়ে ছুটবে ট্রেন। তাছাড়া পদ্মা সেতুতে বিদ্যুৎ, গ্যাসের লাইনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে তার অন্যতম সাক্ষী এই পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়েছে এই সেতুর মাধ্যমে। এভাবেই বিশ্ব মানচিত্রে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

পদ্মা সেতু এক সময় ছিল মানুষের কল্পনার মাঝে। কিন্তু নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে দৃশ্যমান স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবে। এতে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। কারণ ইতিপূর্বে ঢাকা থেকে দক্ষিণ অঞ্চলে যাতায়াত করতে একদিন সময় লেগে যেত। কিন্তু এখন মাত্র ছয় ঘণ্টায় যাতায়াত করা সম্ভব। এতে রাজধানী ঢাকার সাথে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বেড়ে গেল। এ ছাড়া কর্মব্যস্ত মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবনে অভাবনীয় পরিবর্তন হবে। এই সেতুটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে। ফলে প্রকল্পটি দেশের পরিবহন নেটওয়ার্ক এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পৃথিবীর অন্যতম খরস্রোতা পদ্মা নদীতে এত দীর্ঘায়তনের ও আধুনিক মানের সেতু নির্মাণ, তাও আবার বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে কথাটা ভাবতেই এক অন্যরকম ভালোলাগা ও গর্ববোধ কাজ করে। বাংলাদেশের জন্য এটি ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। পুরো বিশ্ব যেখানে এই সেতুপ্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান ছিল, সেখানে তাদের বাঁ’হাত দেখিয়ে তা নির্মাণ করে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। কারও কাছে মস্তক অবনত না করে আত্মমর্যাদায় মহীয়ান হয়ে এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সত্যই মর্যাদা ও সফলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ যেন যোগাযোগ ব্যবস্থার এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

খরস্রোতা পদ্মার দুই তীরকে এক করে এই স্বপ্নমালা গাঁথার কাজটি অবশ্য সহজ ছিল না। স্থপতি প্রকৌশলীরা যেমন অসাধ্য সাধনের মতো এক কাজ করেছেন, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই সেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার সাহসী চরিত্রটিকে আরেকবার জানান দিয়েছেন। নিজেদের অর্থে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ নিজের সক্ষমতারও জানান দিয়েছে বিশ্বকে। পদ্মা সেতু নিঃসন্দেহে দেশের স্থাপত্য ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। এই দেশের মানুষের সাহস আর অদম্য মানসিকতারও দৃঢ় এক প্রতিকৃতি। পদ্মা জয়ের এই সাফল্য পুরো জাতির। এই সাফল্য সরকারের। এই সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

 

শাহ মতিন টিপু: কবি, সিনিয়র সাংবাদিক।

Print Friendly

Related Posts