নৌকা পেতে তারকা, ব্যবসায়ী, আমলার দৌড়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। এবার ৩০০ আসনে দলটির ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি আসনে গড়ে বিক্রি হয়েছে ১১টির বেশি। মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলের আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন ক্রিকেট ও বিনোদন জগতের একঝাঁক তারকা। দলের বর্তমান এমপি ও রাজনীতিবিদের পাশাপাশি চিত্রতারকা, সংগীতশিল্পী, ক্রিকেটার, ফুটবলার, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, প্রশাসন ও পুলিশের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের নাম রয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। এবার ৩০০ আসনে দলটির ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি আসনে গড়ে বিক্রি হয়েছে ১১টির বেশি। মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলের আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

এখন আগ্রহীদের চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের প্রথম সভা বসবে। বেলা ১১টায় তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩০০ আসনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে তিন-চার দিন লাগতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মাগুরা-১ ও ২ এবং ঢাকা-১০ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক নোয়াখালী-২, ফুটবলার দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল মানিকগঞ্জ-২ এবং জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও বাফুফের সদস্য সত্যজিৎ দাশ রুপু চট্টগ্রাম-১২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন।

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), সিমলা (ঝিনাইদহ-১), নায়ক মাসুদ পারভেজ রুবেল (বরিশাল-৩), অভিনেত্রী শমী কায়সার ও রোকেয়া প্রাচী (ফেনী-৩), অভিনেতা ড্যানি সিডাক (ঢাকা-১০) ও সিদ্দিকুর রহমান (ঢাকা ১৭ ও টাঙ্গাইল-১), চিত্রনায়ক শাকিল খান (বাগেরহাট-৩) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দিয়েছেন খুলনা-১ আসনে সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়, ভোলা-৪ আসনে সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন, নওগাঁ-৩ আসনে সাবেক সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, চাঁদপুর-১ আসনে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব গোলাম হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে সাবেক সচিব জিল্লার রহমান এবং সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ সাদিক।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল-৫ আসনে মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া মাহবুব উদ্দিন আহমদ (এসপি মাহবুব) বীরবিক্রম, শরীয়তপুর-১ আসনে সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে সাবেক ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ, জামালপুর-১ আসনে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান, ময়মনসিংহ-৮ আসনে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আবদুর রহিম এবং সাতক্ষীরা-৪ আসনে সাবেক সিনিয়র এএসপি শেখ আতাউর রহমান।

প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন ফরিদপুর-৩ আসনে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ, কুমিল্লা-৩ আসনে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, ঢাকা-১৭ আসনে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা এবং ফরিদপুর-১ আসনে প্রাইম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী সিরাজুল ইসলাম।

সাংবাদিকদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী ফেনী-২, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম কুমিল্লা-১০, ঢাকা টাইমসের সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন ফরিদপুর-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান চিকিৎসকদের বেশ কয়েকজন। তারা হচ্ছেন– বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান টাঙ্গাইল-৩, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম-৩, সাবেক সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান রাজবাড়ী-২, স্বাচিপের সাবেক মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ ময়মনসিংহ-৪, বিএমএর মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী সিলেট-৩, দলের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু মুন্সীগঞ্জ-১, স্বাচিপের সাবেক সহসভাপতি ডা. রউফ সরদার নরসিংদী-৪ এবং খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. শহীদ উল্লাহ খুলনা-৬ আসন।

এবারের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় কিছুটা কম। গত নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ৪ হাজার ৩৭ জন। আসনপ্রতি গড় প্রার্থী ছিলেন ১৩ জনের বেশি। সেবার মনোনয়ন বিক্রি খাতে দলীয় তহবিলে জমা হয়েছিল ১২ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এবার মনোনয়ন ফরমের দাম ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করায় দলের আয় বেড়েছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts