চর গ্রামে ২৬ মার্চ ও স্বাধীন গ্রাম

এএইচএম নোমান

৭ মার্চ’র ভাষণ ছিল সতর্ক প্রস্তুতি নির্দেশ, এর পূর্বের ৬ থেকে এক দফা। ‘৬৯ গণঅভ্যূত্থান ছিল সার্বিক মুক্তির ঝঞ্জাময় রক্তচক্ষু উম্মাদনাময়। রক্তদান পথক্রমা, ‘যে যেখানে আছ যার যা আছে, তাই নিয়েই প্রস্তুত থাক’, জ্ঞান কৌশল জাতিকে চূড়ান্ত গন্তব্যে এগিয়ে নেয়া, যার নাম মুক্ত স্বাধীন লাল সবুজের প্রিয় বাংলাদেশ।

১২ নভেম্বর সত্তরের বন্যাত্তোর ত্রাণ পূনর্বাসন জেলে কৃষি, বিশ্বগ্রাম হাউজিং, সমবায় সমিতি গঠন অবস্থান অগ্রগতি নিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যাকালীন আসরে বসতাম। স্থান চর আলেকজান্ডার বাজার থানা রামগতি জেলা নোয়াখালী। বর্তমানে লক্ষ্মীপুর। আসর লিপির মধ্যে ৭ মার্চ ভাষণের পরবর্তী দিনগুলো মুক্তির রাজনৈতিক ক্ষুুরধারা নিয়েও আলোচনা হতো। পূনর্বাসন উৎপাদন মুক্তি একাকার হয়ে গেল।

২৬ মার্চ ভাসা ভাসা কাটা কাটা শব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’র ঘোষণা শুনতে পেয়েই উপস্থিত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সমবায়ী জনতা তাৎক্ষণিক আমিসহ ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মিছিল বের হলো। বাজারের চতুর্দিক থেকে লোক সমাগম হতে লাগল। ইতোমধ্যে সরকারের রিলিফ কমিশনার সিএসপি আবদুর রব চৌধুরীর নিজ বাড়ী সেবা গ্রাম থেকে মিছিলে এসে অগ্রভাগে থেকে বাজার প্রদক্ষিণ করা হলো। মুক্তির উল্লাসে বাঁধ ভাঙা জোয়ারে চলমান এক পরিবর্তনের মিছিলে পথ সভায় ঠিক হলো কাল হাইস্কুল মাঠে প্রতিরোধ প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ শুরু করতে হবে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ, আনসার, ইপিআর কে কোথায় আছে তাদেরকে উপস্থিত থাকতে বলা হলো। যেমন কথা তেমন কাজ। দুপুর থেকেই স্কুল মাঠ বিশাল জনস্রোতে ভরে গেল।

২৮ মার্চ হঠাৎ বহদ্দার হাট নদী-স্টিমার ঘাট থেকে একদল কৃষক জেলে হাঁপাতে হাঁপাতে দৌঁড়ে সকাল ৯-১০ টা, স্কুল মাঠে এসে জানান দিল স্টিমারে ভর্তি পাক বাহিনী, প্রায়ই কাছে এসে গেছে। ভয় বিহবল কিন্তু সাহসী জনতাকে গাইড করা হলো। লাঠি সোটা, সেল সরকি মরিচের গুড়া, নিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে, যাতে স্টিমার তীরে না ভিড়তে পারে। যার যা আছে যে যেভাবে ছিল তাই নিয়েই মেজর লতিফ তাজল ওসি আজিউল্ল্যা মিয়া, আমিসহ শত শত লোক বহদ্দার হাট ঘাটের দিকে ছুটে যাচ্ছি আর যাচ্ছি…। কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘাট পাড়ে এক নৌকা বোঝাই লোক ও মাঝিসহ জানাল, এরা চট্টগ্রাম থেকে যুদ্ধ ঘোষণা শুনে যে যার মত দেশ গ্রামে ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালীর লোকেরা চলে আসা ঢলের এক অংশ। প্রায় ৪-৫ শ’ যাত্রী বহদ্দার হাট নামলে অস্থানীয় এদেরকে আমরা চর আলেকজান্ডার প্রাইমারী স্কুলে থাকার জায়গা ও ২/৩ দিন পর্যন্ত খানাপিনার ব্যবস্থা করা হলো।… এর মধ্যে সাবধানী আম্মা কামার দিয়ে একটি সরকি বানিয়ে আমার রুমের দরজার পেছনে রেখে দিলেন। এরমধ্যে ইউএনডিপি’র রিজিওনাল প্লানিং স্পেশালিস্ট মিঃ ব্রুশ হাইল্যান্ড ভাটির টেকে চারশত একর খাস জমিতে দ্বিতীয় গুচ্ছগ্রাম (স্বাধীন গ্রাম) নকশা লে-আউট উদ্বোধন শেষে আলেকজান্ডার আব্দুর রব চৌধুরীর বাড়িতে পৌঁছেন। তিনি আব্দুর রব চৌধুরীসহ নদী পথে ফিশিং বোট দিয়ে ঢাকা চলে গেলেন। অসহযোগ কারণে ঢাকার সঙ্গে নদী, সড়ক ও রেলপথ বন্ধ থাকায় ইউএনডিপি’র গাড়িটি সেবা গ্রামে রেখে যান। যা পুরো মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস সেখানে ঘর বন্দি ছিল ….।

অপরপক্ষে শান্তি কমিটি রাজাকার বাহিনী সংগঠিত হতে লাগল। মুসলিম লীগের রামগতি থানা সেক্রেটারী আইয়ুব খান আমলের টি কে (তমগায়ে খেদমত) উপাধিধারী চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও থানা শান্তি কমিটির সেক্রেটারি মোঃ নুরুল ইসলাম’র নেতৃত্বে কিছু টাউট, লুটপাটকারী, খারাপ প্রকৃতির লোক রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে। ভিন্ন স্রোতে চর রমিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া আরেক টি কে খেতাবপ্রাপ্ত রাগগতি থানা মুসলিম লীগ সভাপতি পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। বেপরোয়া আজাদ মিয়া পার্শ্ববর্তী দূর্গম আন্ডার চরে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত ও পরিচালনা করতে লাগলেন….।

২৭ মার্চ আলেকজান্ডার বিকালেই হাইস্কুল মাঠে সংগ্রামী জনতার মুক্তির জাগরণী সমাগম হয়। থানা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী অজিউল্ল্যা মিয়া, ইপিআর থেকে চাকুরী ছাড়া মোল্লা বাড়ীর, মেজর লতিফ নামে পরিচিতি অবসর নেয়া পুলিশ কর্মকর্তা, পন্ডিত বাড়ীর তাজল মিয়া, তাজল ওসি নামে স্থানীয় ভাবে সুপরিচিত প্রমুখ পাক হানাদারদের প্রতিরোধ কৌশল, প্রশিক্ষণ, অগোছালো কিন্তু জরুরী পরিকল্পনার সবই এ সমাগমে স্থান পায়। সভায় যুবকদের প্রশিক্ষণ এবং যুদ্ধকালীন খাদ্য নিরাপত্তার প্রয়োজনেই উৎপাদান চাষাবাদ ধারাবাহিকতা রাখার গুরুত্ব দেওয়া হয়। লাঠি, সেল, সরকি, মরিচের গুড়া প্রস্তুত রাখার কথাও বলেন। রাতে যুদ্ধে প্রস্তুতির সংগে সংগে উৎপাদন কর্মকান্ড চলমান রাখার তাগিদে গোলাম হোসেন লাহাড়ীর বাজার ঘরে চর কালকিনিসহ সারা থানায় শীতকালীন সবজী, আলু, বাদাম, সোয়াবিনসহ ইরি চাষ অগ্রগতি, বিশ্বগ্রাম ২৫ একর করে ২টি ব্লকে ২০০ পরিবারের জন্য জমির প্রাপ্যতা অগ্রগতি জানালেন কেন্দ্রীয় সমবায় সভাপতি আবদুর রব খন্দকার ও ডাঃ তোফায়েল আহমদ।

সমবায়ের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আমার প্রশ্নে হাজী আলী হোসেন উত্তরে জানালেন, বিশ্বগ্রামে অজিউল্ল্যাহ মিয়া পরিবারদের জমি, গভর্ণর হাউজে চাকুরীরত চর আবদুল্ল্যাহ ভুইয়া বাড়ীর ইয়াছিন ভুইয়াদের ৩ ভাইর (৭০’র ১২ই নভেম্বর জলোচ্ছাসে তাঁদের পিতাসহ অনেকেই মারা যান) জমি প্রাপ্ত হয়ে নক্সা অনুযায়ী ঘর ভিটি তৈরীর কাজ চলছে। ২টি টিউবওয়েল, লেট্রিন ও আশ্রয়ের জন্য তাবু স্থাপন, চর আবদুল্লাহর হাজীরহাট বাজার থেকে আমিসহ মসজিদের জন্য ভাঙাচুড়া সামগ্রী সংগ্রহ হয়েছে ইত্যাদি….।

এলাকায় গুজব রটানো হয় যে, ‘কলোনীতে নিয়ে মহিলাদের ‘পর্দা নষ্ট’ ও ‘খ্রীস্টান’ বানানো হবে-এ জন্য যে, পুনর্বাসন কাজে কৃষি বিশেষজ্ঞ ব্রিটিশ নাগরিক মিঃ ডেবিড জে. ষ্টকলি ও আমেরিকান নাগরিক ব্যাপ্টিস্ট মিঃ ম্যাকেনলি পরিবারসহ এখানে অবস্থান করতেন। ভুল ভাঙানো ও আস্থা অর্জনের জন্য মসজিদ স্থাপন করা হয়। এ জন্যই ছেলেমেয়ে পরিবারসহ জলোচ্ছাসে ভাসিয়ে নেয়া হাজী আলী হোসেনই আজিমপুর কলোনীর (?) মত যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংক কমচারীদের অর্থ সহায়তায় ‘বিশ্বগ্রাম’ নাম দেয়া হয়, যার নমুনা নক্সা দেখান এবং এর ডিজাইন রূপান্তর হয়ে বাস্তবায়ন হয়। রিলিফ কমিশনার আবদুর রব চৌধুরী (স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সরকার তাঁকে ইউনাইটেড ন্যাশন্স রিলিফ অর্গানাইজেশন, ঢাকা (টঘজঙউ) প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেন) বিশ্বভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্মারক হিসেবে বিশ্বগ্রাম নাম ঘোষণা করেন। এ সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বিশ্বব্যাংক প্রধান মিঃ সুজুকি কুরিয়ামা টিমসহ উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন। ‘বিশ্বগ্রাম’ যা পরবর্তীতে গুচ্ছগ্রাম-ঠিকানা-আদর্শ গ্রাম-আশ্রায়ণ নামে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা, নদীভাঙ্গা, ছিন্নমূল, ঘরহীনদের আশ্রয়স্থল।

অপরদিকে রামগতি থানার পূর্ব বর্ডারে সুধারাম থানার চর জব্বারের ভাটিরটেকে গুচ্ছগ্রাম করার লক্ষ্যে খাস জমি খোঁজ কাজ চলছিল। চর গাজী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী পরা, হাতে লাঠি, খাস জমি খোঁজার উদ্যোক্তা মীর মোহাম্মদ মিয়া হতবিহবল হয়ে চর আলেকজান্ডার এসে জানালেন ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা জানার সঙ্গে সঙ্গে ভাটিরটেকে মিটিংরত জনসমাগমে অবস্থানরত পাকিস্তান সরকার থেকে স্বেচ্ছা পদত্যাগী এক আমলা উচ্চস্বরে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে ভাটিরটেকের নাম এ মুহূর্ত থেকে ‘স্বাধীন গ্রাম’ ঘোষণা দিলেন। মুক্তিযুদ্ধ ও উৎপাদন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরার আহবান জানান। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মনযূর-উল করীম সিএসপি প্রেরিত এক ম্যাজিস্ট্র্রেটের লাল জীপ গাড়ী করে তিনি ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিতে দিতে দ্রুত মাইজদী সদরে ফিরে যান। মনযূর-উল করীমকে পাক সেনারা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে পৈচাশিক নির্যাতন করে। ‘স্বাধীন গ্রাম’ ২৬ মার্চ’র অন্যতম স্মারক। এই গ্রামকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে (১৯৯৬) বিশাল আশ্রায়ণ প্রকল্প স্থাপিত হয়।

১২ নভেম্বর ১৯৭০, জলোচ্ছাসে চর আবদুল্ল্যার অসহায় আশ্রয়হীনদেরকে নিয়ে ‘বিশ্বগ্রাম’ (গুচ্ছগ্রাম) স্থাপন নিয়ে কাজ চলছিল। ইতোমধ্যে পাক হানাদার সরকার বিশ্বগ্রাম গড়ার মাটিকাটা শ্রমিকদের সমবায়ের হাতে থাকা টাকা পরিশোধ করা হতেই হঠাৎ ১শ’ টাকার নোট অচল ঘোষণা করেছে শুনে মাটিকাটার সর্দার ইউপি সদস্য নুরুল হক মাঝি, আনিস মিয়া বলতে বেহুশ। বেকায়দায় পুরো কর্মযজ্ঞ-কাজ বন্ধ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সব দিককার অনিশ্চয়তা। যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ পুনর্বাসন একাকার।

সে সময় বৃহত্তর রামগতি থানা ব্যাপী কোন ব্যাংক শাখা ছিলনা। নোয়াখালী ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহের আশায় রাতে মাইজদী শহরে অফিসার্স কলোনীতে এসিস্ট্যান্ট রেজিস্টার অব কো-অপারেটিভ সোসাইটিস (এআরসিএস) আবদুল গনি সাহেবের বাসায় ২৯-৩০ মার্চ অবস্থান করি। জেলা প্রশাসন রেস্ট হাউজ ইতোমধ্যে পাক হানাদার সেনাবাহিনী দখল করে নিয়েছে। শহরে টহল দিচ্ছে। সতর্ক নজরদারীতে পরিস্থিতি দেখছে। পাক সরকার টাকা অচল করে দেয়ায় আমার কাছে ২ টাকা ছিল, গনি সাহেব থেকে ৫০ টাকা নিয়ে সোনাপুর চেউয়াখালী হয়ে বাইগ্যার দোনা খেয়া নদী পার হয়ে হাজীগঞ্জ টং দোকান পথে দীর্ঘ কাঁচা বালু ভাঙ্গা রাস্তা পাড়ি দিয়ে ভয় ভীতির মধ্যে আলেকজান্ডার বাসায় পৌঁছি।…

মুক্তিযুদ্ধকালীন কাজ বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি বেগতিক হতে লাগল। আলেকজান্ডার বাজারের উত্তর পাশে আমরা যুবকদের ‘মিতালী’ সংঘে ইনফরমেশন সেন্টার খুলে ত্রাণ-পুনর্বাসনে আসা দেশী-বিদেশীদের বিধ্বস্ত এলাকা চিহ্নিত ও প্রয়োজনাদি সরবরাহ প্রদানে সহায়তা করতাম। ১০-১৫ দিনের মাথায় স্থানীয় ওয়াপদা রেস্ট হাউজে ক্যাম্প করে থাকা রাজাকারদের হিংস্র ২/৩ জন রাস্তায় নজরদারী রাখলো। যে-ই আমার অফিসের সহকারী ভোমা (রফিকুল ইসলাম) মিতালী কার্যালয়ে আসতেছিল পথে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘এই বেটা শা.., নোমান সাহেবের সেখানে কি করছ্? উনি কি গুটি চালাচালি করে? জানছ্ না প্রতিদিন একটা পাখি শিকার না করতে পারলে আমাদের ভাত হজম হয় না। আয়. . .,’ এই কথা বলে ধাক্কাতে ধাক্কাতে রাস্তার পশ্চিম পাশের খাল পাড়ে নিয়ে হাঁটু পানিতে নামিয়ে গুলি করে ভোমাকে স্রোত খালে ফেলে দিল। ভাসতে ভাসতে পাশ গ্রামে লাশ দেখা যায়। (তার পরিবারের জীবিত থাকা ছিন্নমূল বোন নূরজাহান ও ছেলে রিক্সা চালক কাঁটাবন বস্তি থেকে মাঝে মধ্যে আমার সাথে দেখা করতে আসে ও জিজ্ঞাস করে ‘মামা, ভোমা কি মুক্তিযোদ্ধা ছিল? আমরাতো কোন ভাত – কিছু পাই না?’) ভোমা’র বাবা হাবিব ব্যাপারী দূর পথ দিয়ে ঘুরে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে পেছন দিক থেকে আমাদের পুকুর পাড়ের বাসায় আব্বা-আম্মাকে জানান দিল, ‘তাড়াতাড়ি ভাইকে এখান থেকে সরাইয়া দেন। এখনই বাসা থেকে চলে যেতে বলেন। ওরা ভাইকে (আমাকে) মেরে ফেলবে. . . আরো যেন কি বলল ও দৌঁড়ে চলে গেল।’ প্রায় সন্ধ্যা, তাড়াতাড়ি আমার স্ত্রী ও একমাত্র বোনকে নিয়ে পশ্চিমে আসলপাড়ায় নানী পাটোয়ারি বাড়ী গিয়ে রাতে রইলাম। পরদিন সকালে বহদ্দার হাট নৌকা ঘাটে গিয়ে পাল তোলা দাঁড় টানা নৌকায় মেঘনার পশ্চিম পাড়ে জন্মস্থান ভোলা মহকুমা দৌলৎখা থানার হাজীপুর গ্রামের জগাপাতা ঘাটে পৌঁছি। এক মাইল দক্ষিণে একই নানা-দাদা বাড়ী আশ্রয় নিই। যে মাটি কোলেপিঠে করে রেখেছিল শৈশবে-কৈশোরে, সেই মাটি যৌবনে আবার আগলে রাখলো পাকিস্তানী হায়েনাদের কাছ থেকে, মুক্তিযুদ্ধের ঘোর অমানিশার কিছুকাল। এ জন্মভূমি হাজীপুরে জগাপাতা খেয়া ঘাটে বন্যাত্তোর ত্রাণ নিয়ে তোফায়েল ভাইসহ অনেকে আসা দরদী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম আমার সাক্ষাৎ হয় (১৭ নভেম্বর, ১৯৭০)। এসবই খন্ডিত স্মৃতি চিত্র।

বিশাল চতুর্মুখী ইতিহাস কেবল ঘুরপাক খায়, ভোলা যায় না। স-ব স্মৃতিস্থল এখন বৈশি^ক জলবায়ু’র আঘাতে অথৈই নদী গহবরে ।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা রামগতি সমবায় ও ডরপ।
ই-মেইল-nouman@dorpbd.org

Print Friendly

Related Posts